SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা - নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে সুস্বাস্থ্যই হচ্ছে সকল সফলতা ও সুখের চাবিকাঠি। আর সুস্বাস্থ্য রক্ষার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের গুরুত্ব -

বিজ্ঞানের প্রসারের সাথে সাথে নগরায়ণের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে সেই সাথে ঘটেছে আমাদের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন। আমরা যন্ত্র নির্ভর প্রতিযোগিতামূলক জীবনে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে স্বাভাবিক সুস্থ জীবন গঠনের পথকে নিজেরাই জটিল করছি। ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি। জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক জীবনের পরিবর্তে এসেছে অনিয়ম ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন প্রণালি ৷

যখন তখন ফাস্টফুড গ্রহণ, পানির পরিবর্তে সফট্ ড্রিংকস্ পান করা, ধূমপান করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, একেক দিন একেক নিয়মে জীবন পরিচালনা করা ও নির্ধারিত কোনো রুটিন মেনে না চলা, খুব বেশি টিভি দেখা বা কম্পিউটার গেমে নিজেকে অভ্যস্ত করা, সব সময় মানসিক চাপের মধ্যে থাকা, শারীরিক ব্যায়াম না করা বা পরিশ্রমের কাজ না করা, সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে না চলা ইত্যাদি বিষয় নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের অন্তরায় । যার প্রভাবে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও ওজনাধিক্য এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগ যেমন – ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ আমাদের দেশে ক্রমে বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ছোটবেলা থেকেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত না হয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে অভ্যস্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ ইত্যাদি রোগগুলো প্রকাশ পায়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, বার্ধক্য দ্রুত হয়, এ ছাড়া এ সকল রোগের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় আক্রান্ত হওয়াসহ জীবনের দীর্ঘতা বা আয়ু কমে যায়। তাই এক কথায় বলা যায় যে, সুস্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নাই ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের উপায়-

১) স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা – নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠায় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য গ্রহণ, খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা, পরিমিত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা, ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস পরিহার করা, সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত বিধিনিষেধ মেনে চলা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য গ্রহণে সচেতন থাকা, খাদ্য সম্পর্কিত কুসংস্কারগুলো পরিহার করা ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন সম্ভব। আর এর দ্বারা নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠিত করা যায়। শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান

২) নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা - নিয়মতান্ত্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য এবং দীর্ঘজীবন লাভের জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। ছোটবেলা থেকেই যদি প্রত্যেকে নিজের প্রাত্যহিক কাজগুলো যেমন- নিয়মিত নিজের কাপড় কাচা, নিজের ঘর পরিষ্কার করা, আসবাব পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজগুলো নিজে করার অভ্যাস করা হয় এবং নিয়মিত খেলাধুলা করা হয় তাহলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম হয় ফলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর যারা নিজেদের কাজ করতে পারেন না বা খেলাধুলা করার সুযোগ নেই তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা বা ব্যায়াম শরীরের ওজন স্বাভাবিক রেখে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩) ঘুমের সময় ও জেগে উঠার সময় মেনে চলা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে - ঘুম থেকে উঠা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য জরুরি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা অনেক রাত করে ঘুমাতে যায় ও ঘুমের অনিয়ম করেন তাদের শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দেয়। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নির্দিষ্ট নিয়মে ঘুমাতে হবে। অনেক রাত করে ঘুমানো পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হবে এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার নিয়মিত অভ্যাস প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

৪) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা - অনিয়ন্ত্রিত ও জটিল জীবনযাপন প্রণালির কারণে বর্তমানে মানসিক চাপ বেড়ে গেছে, যা সুস্বাস্থ্যের অন্তরায় এবং উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল মানসিক রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়ন্ত্রিত সহজ সরল জীবন প্রণালি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। জীবন চলার পথে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যায় অস্থির না হয়ে বিচক্ষণতার সাথে তা মোকাবিলার উপায় বিবেচনা করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে কাজ সম্পাদন করা, অতিরিক্ত অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে পারলে মানসিক চাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৫) যথাযথ সময় পরিকল্পনা করা এবং নিজেকে অভ্যস্ত করা- নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের জন্য যথাযথ সময় পরিকল্পনা করা এবং নিজেকে তার সাথে অভ্যস্ত করা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ছোটবেলা থেকেই সময়ের সদ্বব্যবহার করতে না পারলে পরবর্তী জীবনেও এর নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করতে হবে। সুষ্ঠু সময় পরিকল্পনা ও এর অনুশীলনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন সহজ হয় ৷

৬) ধূমপান বর্জন করা – নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন। আমরা সবাই জানি, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপায়ী ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা বেড়ে যায় এবং কোনো কোনো পুষ্টি উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এদের বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া ধূমপায়ী ব্যক্তি যখন ধূমপান করেন তখন তিনি শুধু নিজেরই ক্ষতি করেন না, তার আশপাশে অবস্থানকারী ব্যক্তিদেরও ক্ষতি করেন। এক কথায় বলা যায় যে ধূমপায়ী ব্যক্তির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই অবশ্যই ধূমপান বর্জন করতে হবে।

৭) ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে চলা – ছোটবেলা থেকেই পানাহারে, চলাফেরায়, মেলামেশার ক্ষেত্রে - যদি ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলায় অভ্যস্ত হওয়া যায় যেমন- পরিমিত আহার করা, অতি ভোজন পরিহার করা, মদপান থেকে বিরত থাকা, পারস্পরিক মেলামেশায় নিরাপদ ও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলা যায় তাহলে খুব সহজেই নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ জীবনযাপন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

 

৮) নিজস্ব নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠিত করা ও মেনে চলা- সহজ করে জীবন পরিচালনার জন্য ছোটবেলা থেকেই নিজস্ব নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠিত করা ও তা মেনে চলা। নিয়মতান্ত্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রতিষ্ঠায় উপরের আটটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোটবেলা থেকে নিজের মধ্যে বিষয়গুলো সম্পর্কে অনুধাবন করে চর্চা করতে পারলে খুব সহজেই নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ জীবন লাভ করা যায়। মনে রাখতে হবে সুস্থ ও নিরোগ জীবনযাপনের জন্য এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই ।

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করার পরিণতি - নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন না করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যেমন-

  • ওজন বেড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ দেখা দেয় ৷
  • জীবনের দীর্ঘতা বা আয়ু কমে যায়।
  • কর্মক্ষমতা কমে যায় ৷
  • বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

বর্তমানে আমাদের দেশে উপরের সমস্যাগুলো সৃষ্টির প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আমরা এখন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে জানব।

কাজ – তুমি কীভাবে তোমার জীবনকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত করতে পারবে তা বর্ণনা কর ।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.